বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা এক ভয়ংকর খুনির হাতে || Fritz Haber || The Giver and the Taker Away |
উনিশশো-আঠারো সালের রসায়নে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বিজ্ঞানীর নাম জানেন কি? চাকরির পরীক্ষার্থী না হলে আপনার এ প্রশ্নের উত্তর জানার সম্ভাবনা কমই আসলে. সেই বিজ্ঞানী নাম ফিট সাবার. জাতিতে জার্মান. যিনি মানব সভ্যতার ইতিহাসের সবচাইতে বড় সমস্যাগুলোর একটি সমাধান খুঁজে বের করতে পেরেছিলে
তার সেই আবিষ্কার এতটাই সুদূরপ্রসারী যে ধারণা করা হয় তা আজকের পৃথিবীর চার বিলিয়ন মানুষের জীবন রক্ষাকারী হিসেবে কাজ করছে. কিন্তু অবাক করা বিষয়টি জানেন? তিনি যখন নোবেল পুরস্কার নিতে যান সে অনুষ্ঠানে অনেক খ্যাতনামা বিজ্ঞানী উপস্থিত হননি
শুধুমাত্র তার প্রতি সীমাহীন ঘৃণার বশবর্তী হয়ে ভিন্ন শাখায় নোবেল বিজয়ী দুই ব্যক্তি তাদের নোবেল পুরস্কার গ্রহণই করেননি নিউ ইয়র্ক টাইমস তাকে তুলোধুনা করে লেখাও ছেপেছিল হ্যাঁ এই সেই
যিনি একই সাথে বিশ্বের ইতিহাসের অন্যতম নন্দিত ও নিন্দিত একজন সায়েন্টিস্ট. কিন্তু কেন? সে প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজবো তথ্যচিত্রের আজকের এপিসোডে
মার্কিন মুলুকে বেশ মজার ও অদ্ভুত এক আইন রয়েছে. কোন আমেরিকার নাগরিক যদি এমন কোন দিক খুঁজে পায় যেখানে প্রচুর পরিমাণে পাখির মল বা বিষ্ঠা পাওয়া যায়. তাহলে ওই দ্বীপকে আমেরিকা তাদের অধীনস্থ করার জন্য উঠে পড়ে লাগবে. এমনকি জরুরি পরিস্থিতি হলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওই দ্বীপ দখলের জন্য সেনাবাহিনীও পাঠাতে পারেন
অবাক লাগছে এরকম দশটি দ্বীপ কিন্তু সত্যিই রয়েছে. যেগুলোকে আমেরিকা দখল করেছে প্রচুর পরিমাণে পাখির মল পাওয়া যাওয়ার কারণে. এই উদ্ভটা আইনটি আঠারোশো ছাপান্ন সালে প্রণীত হলেও এখনো পর্যন্ত তা কার্যকর
কিন্তু প্রশ্ন হলো পাখির মলের জন্য এত কিছু কেন? কি হবে তা দিয়ে? পেরুর উপকূলবর্তী অঞ্চলে এমন কয়েক ডজন দ্বীপ আছে. যেখানে মিলিয়ন মিলিয়ন সামুদ্রিক পাখি মিলনের জন্য একত্রিত হয়. এত পাখি একত্রিত হলে সেখানে প্রচুর মল জমা হওয়াই স্বাভাবিক
এখনকার আবহাওয়া উষ্ণ ও শুষ্ক হওয়ায় এত মল শুকিয়ে শক্ত হয়ে স্তুপে পরিণত হয়. এতো বেশি মল যে তিরিশ মিটার বা একশো ফুট উঁচু স্তূপ সৃষ্টি হওয়াও বিচিত্র নয়
এই ইস্তূপকে বলা হয় গুয়ানো. ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে গোয়ানো বেচা কেনা ছিল অনেক লাভজনক ব্যবসা. ভুল কিছুই শোনেননি. পাখির বিষ্ঠায় বেচা কেনা হতো. তখনকার দিনে প্রতিপাউন্ড গুয়ানো ছিয়াত্তর ডলারেও বিক্রি হয়েছে. সে সময় এই অঙ্কটা এতটাই বেশি ছিল যে
চার পাউন্ড গুয়ানোর দাম দিয়ে এক pound সোনাই কিনে ফেলা যেত. আজগুবি কেচ্ছার মতো শোনালেও এটাই কিন্তু সত্যি. কিন্তু এমনটা কেন হয়েছিল? তা জানার জন্য মানব শরীরের গঠন উপাদান সম্পর্কে কিঞ্চিৎ ধারণা নেওয়া দরকার
আমাদের শরীরের গঠন উপাদানগুলোর মধ্যে নাইট্রোজেনের অবস্থান চতুর্থ. ডিএনএ ও আরএনএর মূল গঠন উপাদান এই নাইড্রোজেন. এ কারণে পৃথিবীতে প্রাণের স্পন্দন টিকিয়ে রাখতে নাইট্রোজেন অত্যাবশ্যকীয়. আমরা নাইট্রোজেন মূলত পেয়ে থাকি বিভিন্ন শাকসবজি ও তৃণভোজী প্রাণীর মাংস খেয়ে
এসব শাকসবজি সহ গোটা উদ্ভিদ জগত নাইট্রোজেন গ্রহণ করে মাটি থেকে. সমস্যা হলো বছরের পর বছর ধরে ফসল ফলালে জমিতে নাইট্রোজেনের মাত্রা কমে যায়. এর ফলে কমে যায় সালোক সংশ্লেষণের হার. কমে ফসলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও
ফলে ফসলের উৎপাদন আশানুরূপ হয় না। তো মাটিতে নাইট্রোজেন বাড়ানোর উপায় কি? একটা উপায় সেই পাখির মল বা গোয়ানোতে মোটামুটি বিশ শতাংশই নাইট্রোজেন। তাই জমিতে গোয়ানো ব্যবহার করলে ফলন অনেক ভালো হয়।
লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দ্বীপের গোয়ানো ভান্ডারের খবর ছিল বিশ্বের বড়ো শ্রেণীর সব দেশের কাছে. আঠেরোশো পঁয়ষট্টি সালে মেরু, চিলি, গিলিভিয়ার, ইকুয়েটার অধীনস্থ গোয়ানো সমৃদ্ধ দ্বীপগুলোর দখলদারি নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধ বাধিয়ে দেয়. পাখির বিষ্ঠা নিয়েও যুদ্ধ. কান্ডটা দেখেছে
আঠারোশো-বাহাত্তর সাল নাগাদ সারা বিশ্ব ল্যাতিন আমেরিকা থেকে এত বেশি গোয়ানো সংগ্রহ করতে থাকে যে পেরু গোয়ানো রপ্তানি বন্ধ করে দেয়. এখন উপায় জমিতে নাইট্রোজেন তো লাগবেই. দেখুন এমনিতে নাইট্রোজেন কিন্তু মোটেও দুষ্প্রাপ্য নয়
বাতাসের আটাত্তর শতাংশই নাইড্রোজেন. সমস্যা হলো এই নাইট্রোজেন গাছপালা গ্রহণ করতে পারে না. বাতাসের নাইট্রোজেন ভেঙে কোনোভাবে মাটিতে মিশলেই তার শোষণ উপযোগী হয়. এই কাজ যদি প্রাকৃতিক উপায়ে হয়ে থাকে
বিদ্যুৎ চমকানোর ফলে সৃষ্ট পরিচ্ছন্নিত প্রভাবে আর মাটিতে বসবাসকারী কিছু ব্যাক্টেরিয়া তারা কিন্তু এসব উপায়ে যেটুকু নাইট্রোজেন মাটিতে মেশে তা একেবারেই পর্যাপ্ত নয় এ কারণে কৃত্রিম উপায়ে মাটিতে নাইট্রোজেন বাড়াতে কোমর বেঁধে নামলেন রসায়নবিদরা
গুহানোতে পাওয়া যায় এমন এক নাইট্রোজেন গঠিত যৌগ হলো অ্যামোনিয়া. কৃত্রিম ভাবে এই অ্যামোনিয়া তৈরির চেষ্টা চলে আসছিল ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রাঙ্গ থেকে. কিন্তু না কোনভাবেই তা তৈরি করা যাচ্ছিল না. মোটামুটি একশো বছর ধরে চলল প্রচেষ্টা. অসংখ্য বিজ্ঞানী নিরলস শ্রম বৃথা গেল
উনিশশো চার সালে এ কাজে হাত দেন হ্যাঁ সেই হাবার. যিনি পরবর্তীতে উনিশশো-আঠারো সালে নোবেল পেয়েছিলেন. খাবার অ্যামোনিয়া তৈরির জন্য নাইট্রোজেন ও হাইড্রোজেনকে উচ্চ
তাপমাত্রায় ও উচ্চচাপে মিশ্রিত করে. এই বিক্রিয়ার জন্য আর প্রয়োজন ছিল একটি উপযুক্ত প্রভাবকে. আবার এ কাজের জন্য বেছে নেন বিরল মৌল অস্মিয়ামকে. তৎকালীন বিশ্বে মাত্র একশো কেজি বিশুদ্ধ অস্মিয়া মজুদ ছিল
এক বাউট কোম্পানির হয়ে কাজ করার সুবাদে এর একটি বড় অংশই হাতের নাগালে পেয়ে যান তিনি. উনিশশো নয়ের মার্চের তৃতীয় সপ্তাহের একদিনে প্রেসার চেম্বারে অস্টমিয়াম সিট, নাইট্রোজেন এবং হাইড্রোজেন রেখে পাঁচশো ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় দুশো atom চাপ প্রয়োগ করেন তিনি. ফলাফল
ammonia, আনন্দের আতিশয্যে ল্যাবের এক রুম থেকে অন্য রুমে ছোটাছুটি লাগিয়ে দেন বিজ্ঞানী মশাই. একশো বছর ধরে যে অসাধ্য সাধন করা যায়নি তা তিনি করে ফেলেছেন. একি চাট্টিখানি কথা
জার্মানির বৃহত্তম কেমিক্যাল কোম্পানি. B. A. S. S. S. S. S. F. খাবারের formula ব্যবহার করে সর্বপ্রথম অ্যামোনিয়ার বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে. চার বছরের মধ্যে এই কোম্পানির দৈনিক উৎপাদন গিয়ে দাঁড়ায় পাঁচ টনে. বাতাস থেকে খাদ্য উৎপাদন. হ্যাঁ. ব্যাপারটা কিন্তু খানিকটা এমনই
বাতাসে নাইট্রোজেনকে মাটিতে মিশিয়ে ফসল ফলানো. ফসলের ফলন চার গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি. এইতো চেয়েছিল সারা দুনিয়ার মানুষ. নাইট্রোজেন ছাড় না থাকলে পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত যে পরিমান ফসল উৎপাদন হয় তার থেকে অনেক কম পরিমান ফসল উৎপাদন হতো
কতটা কম জানেন? চার বিলিয়ন মানুষের খাবারের সমপরিমাণ. বলতে গেলে বিলিয়ন, বিলিয়ন মানুষকে খাদ্যের অভাবে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছেন হাবা. এমন এক আবিষ্কার থেকে প্রাপ্ত অর্থে বড়লোক বনে যেতে সময় লাগলো না খাবারের
বিজ্ঞানী মহলে তার খ্যাতিও তখন চরমে. Max plank আইনস্টাইনের মতো বিজ্ঞানীরা তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু. কিন্তু তা সত্ত্বেও তার নোবেল প্রাপ্তির অনুষ্ঠানে এত বিজ্ঞানী অনুপস্থিত ছিলেন কেন?
আপাতত এতটুকুই
We respect your freedom of speech.
Please don't write anything that might violate someone else's privacy.