ব্রিটিশদের প্রথম শিকার ছিল মুসলিমরা | British vs Muslim | History | Muslim History |
একটা সময় ছিল যখন পুলিশের গায়ের গন্ধ পেলে নির্দোষ মানুষেরাও গ্রাম ছেড়ে পালাতো. নির্যাতন, হয়রানি, বিনা বিচারে আটকে রাখা যার মানে ছিল ব্রিটিশরা.
ব্রিটিশ শব্দটি বাঙালির কাছে কালো অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত. অন্তত ইতিহাস তো তাই বলে. কারণ ব্রিটিশদের কারণেই ভারতবর্ষের মানুষ
কখনো তিতুমিরের বাঁশের কেল্লায়,
কখনো বা মিরাটের বন্দিশালায়,
কখনো বা বাহাদুর শাহ পার্কে কখনো
অমৃতসরের বাগানে,
কখনো দিল্লির রাজপথে বন্দুকের গুলি খেয়ে অকাতরে প্রাণ দিয়েছেন.
আবার ক্ষুদিরাম হয়ে ফাঁসির মঞ্চেও দাঁড়িয়েছেন.
আজকের বিশ্লেষণ ভারতবর্ষে ব্রিটিশদের শোষণ প্রসঙ্গে সঙ্গে আছে imroul Hassan community.
প্রথমেই জেনে নেই ব্রিটিশদের ভারত প্রবেশ প্রসঙ্গে. ব্রিটিশরা প্রথম ব্যবসার কথা বলে বাংলায় আসে. যে চুক্তি বলে ব্যবসার অনুমতি পায় কিছুদিনের মধ্যেই তা খেলাপ করে স্থানীয়দের ঠকাতেও শুরু করে.
বাংলার শাসক নবাব সিরাজউদ্দৌলা কয়েকবার সুযোগ দিলেও ফের চুক্তি ভঙ্গ করায় নবাব ব্রিটিশদের তাড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন. তখন সিরাজউদ্দৌলাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেন. ষড়যন্ত্র করা হয়.
যার নেতৃত্বে ছিলেন লর্ড ক্লাইভ. টাকা ও ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে এই দেশীয় কিছু মুনাফিককে hug করে নেন. মীরজাফরদের বিশ্বাস ঘাতকতায় ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সিরাজ উদ্দৌলা পরাজিত ও নিহত হন. ভারতবর্ষে ব্রিটিশ যাত্রার সেই শুরু.
এরপর শুরু হয় শোষণ আর নির্যাতন. মূলত শাসন নয় শোষণ ভারতবর্ষও তার ব্যতিক্রম ছিল না. যার সাথে মিশে আছে দুঃখ গাঁথা অধ্যায়.
যার পরতে পরতে অনেক নির্যাতন আর অস্ফুটও কান্না জড়িত. নীল চাষ যে শব্দটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে কোনো ইংরেজ সাহেবের হাতে জাবুক অসহায় কৃষকের চোখে জল নিরুপায়ের আহাজারি ও ক্ষুধার হিংস্র ধাবা.
জোর করে কৃষকদের দিয়ে নীল চাষ করানো হয়. প্রতিবাদ জানালে করা হতো গুলি করে হত্যা
একশো বছর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক শোষণ. নবাব সিরাজ উদ দৌলাকে ষড়যন্ত্র করে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্রকারী কেরানি থেকে গভর্নর বলে যাওয়া লর্ড ক্লাইভ দিল্লির বাদশা আলমের কাছ থেকে বাংলা বিহার উড়িষ্যার দেওনি লাভ করেন.
এরপর নবাবের হাতে থাকে প্রশাসনিক দায়িত্ব আর রাজস্ব আদায় ও ব্যয়ের পূর্ণ কর্তৃত্ব পায় কোম্পানি. এতে বাংলার নবাব আসলে ক্ষমতাহীন হয়ে পড়ে আর এই সুযোগে কোম্পানির লোকেরা খাজনা আদায়ের নামে চালায় অবাধ লুন্ঠন শুরু করে অত্যাচার.
পাঞ্জাবের অমৃতসর শহরের জালিয়ানওয়ালাবাগ নামের এক বাগানে নারী ও শিশুসহ কয়েক হাজার মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় শুধুমাত্র ধারণার বর্ষবর্তি হয়ে যে তারা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা করেছে.
কিন্তু তারা আসলে সমবেত হয়েছিল শিখ নববর্ষ উদযাপন উৎসবের.
ব্রিটিশদের গুলির হাত থেকে বাঁচতে অনেকে বাগানের ভিতর কুয়াতে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রাণ দেন. জানা যায় ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাগামী যেসব নারী প্রতিবাদী হতেন তাদের উপরে চলত নির্মম নির্যাতন.
সাঁওতাল বিদ্রোহের নায়িকা ইলাম মিত্র যার শিকার হয়েছেন. ব্রিটিশরা মুসলমান সৈন্যদেরকে দিত. শুকরের চর্বি থেকে তৈরি কার্তুজ আর হিন্দু শৈন্যদেরকে দিতো গরুর চর্বি থেকে তৈরি কার্তুজ. রাইফেলে লুট করার আগে দাঁত দিয়ে কামড়ে সেগুলি খুলতে হতো. বিষয়টি জানাজানির পর জ্বলে ওঠে উভয় ধর্মের সৈন্যরা সিপাহী বিদ্রোহ যেটি জনগণের ব্যাপক সমর্থন পেলেও
দেশীয় দালালদের সাহায্য নিয়ে জয়ী হয়ে যায় ব্রিটিশরা. এরপর সৈন্য সাধারণ মানুষদের কেও পাইকারি হারে হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে ফাঁসি দেয়. ভীতির সৃষ্টি করে রাস্তার পাশে লাশ ঝুলিয়ে রাখে. পলাশীর প্রহসন মূলক যুদ্ধের মধ্য দিয়ে উপমহাদেশের উপর আধিপত্য বিস্তার করার পর এই শাসন ক্ষমতা ধরে রাখাটাই ইংরেজদের মূল চিন্তা ছিল.
যার প্রধান শিকার হয়েছিল মুসলিম জনগোষ্ঠী. যার সহজ উদাহরণ ব্রিটিশদের পছন্দের গোলাম, জমিদাররা. জমিদারদের বাড়ির সামনে দিয়ে জুতা পায়ে হেঁটে হেঁটে গেলেও সাধারণ মানুষকে চাবুক পিটা খেয়ে আধমরা হতে হতো. যা নিয়ে কোনো মানুষই মুখ খুলতে পারতেন না. ব্রিটিশদের গোলাম জমিদাররাই যদি এতটা করেছে তাহলে ব্রিটিশরা কি করেছে তা সহজেই অনুমানযোগ্য.
এ ছাড়া ধর্মীয় অর্থনৈতিক সামাজিক ও শিক্ষাগত সকল দিক দিয়েই মুসলিমরা হয় ব্রিটিশদের প্রথম শিকার. চেষ্টা করা হয় মুসলিমদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে পঙ্গু করে দেওয়ার.
পলাশী যুদ্ধের পর ইংরেজরা বাংলার হিন্দুদের জমিদারি তালুকদারি সরকারি চাকরি ব্যবসা বাণিজ্যের সুযোগ সুবিধা দিয়ে নিজেদের দলভক্ত করে নেয়. যেহেতু বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব ছিলেন মুসলিম. কাজেই চতুর রবার্ট, ক্লাইভ, পলাশীর জয়কে মুসলিমদের উপর হিন্দুদের জয় হিসেবে চিত্রিত করার পরিকল্পনা করেন.
ইংরেজরা অতি সূক্ষ্মভাবে হিন্দুদের দিয়ে নিজেদের কার্যসিদ্ধির প্রয়াস চালায়. রাজনীতিকে ধর্মের সাথে মিলিয়ে দেয় ফলস্বরূপ যুগ যুগ ধরে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বসবাস করা দুটি জাতির মধ্যে আমরা আর তোমরা পরিচয় নিয়ে বিভেদের সৃষ্টি হয়. ইংরেজরা চলে গেছে. কিন্তু এই রাজনৈতিক প্রেতাত্মা এখনো উপমহাদেশে রয়ে গেছে. ব্রিটিশদের সুকৌশলে বোনা বিভক্তির বীজ ভারতবাসীর মনে এমন ভাবে গেঁথে গেছে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে দুটি জাতি তখন আত্ম তাদের অনিবার্য হয়ে পড়েছিল যেন যে অনিবার্যতার পথ ধরেই আসে দেশভাগ. যে বিভক্তির ছাপ রয়ে গেছে আজও.
We respect your freedom of speech.
Please don't write anything that might violate someone else's privacy.